বান্ধবী
ও শিশুসন্তানকে নিয়ে কোত্থেকে যেন ফিরলেন ডেভিড ওয়ার্নার। শেন ওয়াটসন
বেরিয়ে গেলেন বান্ধবীকে নিয়ে। বাংলাদেশ দল একটু আগেই রুমে ঢুকে গেছে।
ব্রিসবেনের সোফিটেল হোটেলের লবিতে চেক ইন করার অপেক্ষায় আয়ারল্যান্ড দল।
ফিল
সিমন্স সেই অনাদিকাল থেকে এই দলের কোচ। নিজে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, সেই
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আবারও বিশ্বকাপে হইচই ফেলে দিয়েছে আইরিশরা।
পেশাদার কোচদের দেশ-টেশের আবেগ থেকে মুক্ত হতে হয়। তার পরও নিজের দেশের
বিপক্ষে জিতলে কি মিশ্র একটা অনুভূতি হয়?
সিমন্স প্রশ্নটার উত্তরই
দিলেন না, ‘ওটা তিন দিন আগের কথা। আমার মাথায় এখন শুধু আমিরাত।’ ২৫
ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনেই দুই সহযোগী সদস্যদেশের লড়াই। যেটিতে জিতে আরেকটি
বড় দলকে মেরে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে আয়ারল্যান্ড।
একটু
পর লবিতে আরেক কোচের দেখা মিলল। নিজেই গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে
বললেন, ‘ম্যাচটা হবে কি না কে জানে! আমি তো আর আবহাওয়াবিদ নই।’ কোচের নাম
ড্যারেন লেম্যান। কোন দলের কোচ তা তো আপনি জানেনই।
অ্যাডিলেড ওভালের
বাইরে ড্যারেন লেম্যানের একটা মূর্তি আছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে
রানের বন্যা বইয়ে দেওয়ার স্বীকৃতি। পালাবদলের ঝাপটায় টালমাটাল
অস্ট্রেলিয়াকে আবার কক্ষপথে ফিরিয়ে আনাটাও যাঁর সিভিতে যোগ হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার কোচ শুনলে নিশ্চয়ই অবাক হতেন যে, শনিবার গ্যাবায় ম্যাচটিকে
ঘিরে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ দলেরও মন খারাপ।
ব্রিসবেন বৃষ্টির শহর হয়ে
গেছে বেশ কদিন ধরেই। কাল দুপুরে বাংলাদেশ দলও ক্যানবেরা থেকে ব্রিসবেনে
নামল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। আগের সূচি অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে
সরাসরি গ্যাবায় যাওয়ার কথা ছিল। কারও ইচ্ছা হলে অনুশীলন করবে। সঙ্গে
নির্ধারিত ছিল একটা টিম মিটিং। বৃষ্টির কারণে গ্যাবায় যাওয়া বাতিল। আজ
ম্যাচের আগের দিনও খোলা মাঠে অনুশীলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সরকারি
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দুই দিন অর্থাৎ আজ ও আগামীকালও
বৃষ্টি হবে। ওয়েবসাইটে শতাংশের হিসাবে সম্ভাবনাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হওয়া
না-হওয়াটা এখন তাই পুরোপুরিই ঘূর্ণিঝড় মার্সিয়ার ‘মার্সি’র ওপর।
বিশ্বাস
করবেন কি না জানি না, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তাতে খুবই মন খারাপ। আর
কয়েক দিন পর কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া-বধ কাব্যের এক দশক পূর্তি হবে।
কার্ডিফে বাংলাদেশ জিতবে, ম্যাচের আগে কেউই তা ভাবেননি। ‘অস্ট্রেলীয়
দুর্গ’ গ্যাবায় বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেবে—এটা বোধ হয় আরও
বেশি কষ্টকল্পনা। বৃষ্টি ১ পয়েন্ট জুটিয়ে দিলে বাংলাদেশ দলের তো উল্টো
খুশি হওয়া উচিত। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা কার্ডিফে ছিলেন, ব্রিসবেনেও
আছেন। মুফতে ১ পয়েন্ট পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় খুশি হওয়া দূরে থাক, বরং
তীব্র আপত্তি তাঁর কণ্ঠে, ‘আমি নিজে তো এমন ভাবছিই না, দলেরও কেউ ভাবছে
না। এমন উইকেটে খেলা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, একই সঙ্গে বড় সুযোগও।
খেলাটা না হলে সেটি খুব হতাশার হবে।’
গ্যাবার উইকেটের সঙ্গে পেসারদের
জন্মজন্মান্তরের সখ্য। মাশরাফির তাই এখানে খেলতে মুখিয়ে থাকারই কথা।
কিন্তু তামিম ইকবালও যে একই কথা বলছেন! গতিময় বাউন্সি উইকেটে
অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারদের মুখোমুখি হওয়া এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওপেনারদের জন্য তো আরও বেশি। তামিমের যে আবার
চ্যালেঞ্জটাই পছন্দ, ‘অস্ট্রেলিয়ার এই বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে খেলার খুব
ইচ্ছা আমার। ওদের খেলে আমি নিজের অবস্থানটাও বুঝতে চাই।’
২০০৩ সালে
টেস্ট-ওয়ানডের একটা পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। এর পাঁচ বছর পর তিনটি ওয়ানডে।
বাংলাদেশ দুবার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছে, তবে কোনোবারই অস্ট্রেলিয়ার
বিখ্যাত ভেন্যুগুলোর কোনোটিতে খেলার সুযোগ মেলেনি। ভবিষ্যতেও কবে ব্রিসবেনে
খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে বা আদৌ পাওয়া যাবে কি না ঠিক নেই। বাংলাদেশের
ক্রিকেটাররা তাই অলৌকিক কিছুরই প্রার্থনা করছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেন
মিথ্যা হয়। যেন ম্যাচটা হয়।
হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে এসে এমসিজিতে
বিগ ব্যাশে সাকিবের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন তামিম। এসব মাঠে খেলার আকুতিটা
তাতে আরও বেড়েছে, ‘ছবিতে-টেলিভিশনে এত দেখেছি, সবকিছু মিলিয়ে দেখছিলাম।
এমসিজিতে একবার শহীদ আফ্রিদি বিশাল একটা ছক্কা মেরেছিল। বলটা কোথায়
পড়েছিল তা বোঝার চেষ্টা করলাম।’ বিশ্বকাপের ফিকশ্চার হওয়ার দিন থেকেই
ব্রিসবেন আর মেলবোর্নের ম্যাচ দুটির দিন গুনছিলেন। সেটি বলতে বলতে তামিম
প্রশ্ন করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার একটা মাঠ আছে না, অনেকটা লর্ডসের মতো দেখতে?’
লর্ডসের
সঙ্গে যে মাঠের মিল খুঁজে পান, সেই এসসিজিতে তো আর বাংলাদেশের খেলা নেই।
তবে হ্যাঁ, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারলে সেখানে খেলার একটা সুযোগ থাকবে।
তামিম মৃদু হেসে বললেন, ‘উঠেও তো যেতে পারি।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১
পয়েন্ট পেয়ে গেলে সেই পথটা একটু মসৃণ হয়ে যাবে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে
প্রত্যাশিত জয়ের সঙ্গে বড় কোনো একটা দলকে হারিয়ে দিতে পারলেই হবে। সেই
সম্ভাবনা কি ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই বেশি? তামিমের মনে অন্য হিসাব, ‘আমার তো
মনে হয় শ্রীলঙ্কাকে আমরা হারিয়ে দিতে পারি। আমাদের ভালো চান্স আছে।’
আফগানিস্তানের
বিপক্ষে জয়টা পুরো দলকে এমনই নির্ভার আর ফুরফুরে করে দিয়েছে যে,
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটা যেন হয়ে গেছে উৎসব। স্বপ্নের আকাশটাও এখন
অনেক বড়। তামিম ক্যানবেরায় ভারত-পাকিস্তান নিয়ে কথোপকথন স্মরণ করিয়ে
দিয়ে বললেন, ‘আপনি বলেছিলেন না, মিসবাহর কথা শুনে মনে হয়েছে “যাক, ভারত
ম্যাচটা গেছে। এখন বিশ্বকাপে মন দেওয়া যাবে।” আফগানিস্তানকে হারানোর পর
আমাদেরও এমন মনে হয়েছে। সবার পিঠের ওপর থেকে যেন ২০ কেজি ওজন নেমে গেছে।’
মাশরাফিদের আসলেই অমন দেখাচ্ছে!
আজকের খেলা
নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড
(সকাল ৭টা, ওয়েলিংটন)
আগামীকালের খেলা
পাকিস্তান-ও. ইন্ডিজ
(ভোর ৪টা, ক্রাইস্টচার্চ)
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
(সকাল ৯-৩০ মি., ব্রিসবেন)
গতকালের ফল
আরব আমিরাত: ৫০ ওভারে ২৮৫/৭
জিম্বাবুয়ে: ৪৮ ওভারে ২৮৬/৬
ফল: জিম্বাবুয়ে ৪ উইকেটে জয়ী
more-www.24banglanewspaper.com