জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি
মন্ত্রী
শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এতে চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। চিঠিতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার
ফার্নান্দেজ তারানকোকে সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় দিকগুলো দেখভালের দায়িত্ব
দেয়ার বিষয়টি দুই নেত্রীকে অবহিত করেন। তারানকোকে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর
মধ্যে সংলাপ আয়োজনের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
মহাসচিব এসব বিষয়ে তারানকোকে সহযোগিতা করার জন্যে দুই নেত্রীর প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন। মহাসচিব এটাও জানান যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিদ্যমান সংকট
নিরসনে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছে। বিএনপি ও কূটনীতিক সূত্রে এসব তথ্য
পাওয়া গেছে।
জানা
গেছে, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু
করেছেন তারানকো। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একে আব্দুল মোমেনের
সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা
বলেছেন টেলিফোনে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
পরিষদের একজন সদস্য সম্প্রতি তারানকোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক থেকেই
মোবাইল ফোনে তারানকো খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দু’জনের মধ্যে
চলমান সংকট ও তা নিরসনের বিষয় নিয়ে কথা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট
সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার
টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো আমাকে জানিয়েছেন
যে, তাকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখাশোনার জন্যে জাতিসংঘ মহাসচিব
দায়িত্ব দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তিনি আমার সঙ্গে বৈঠক করতেও চেয়েছেন। আমি
বলেছি, অবশ্যই বসে আলাপ করব।’ দুই নেত্রীর কাছে মহাসচিবের চিঠি সম্পর্কে
জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কিছু একটা পাঠাচ্ছে। এটা আমি এখনও দেখিনি।’এর
আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘের মহাসচিব দুই নেত্রীকে
চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতেও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ
তারানকোকে সহযোগিতা করার জন্য দুই নেত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মহাসচিব বান
কি মুন। এরপর একই বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন অস্কার ফার্নান্দেজ
তারানকো। ওই সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে সংলাপে বসাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সংকট সমাধান করতে পারেননি। এরপর অনুষ্ঠিত হয় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন।
ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির পর থেকে দেশের পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠেছে
যা দেড় মাস ধরে চলছে। চলমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। এই
পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায় তা নিয়ে কাজ করতেই জাতিসংঘের মহাসচিব
দায়িত্ব দিয়েছেন তারানকোকে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির
শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।জাতিসংঘ
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক গত সপ্তাহের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে
জানিয়েছেন- নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা
দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
হয়েছে। তারা উভয়েই বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তার প্রথম
সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান নিজেদেরই করতে হবে। এ
ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে তার বন্ধুরা সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে। এদিকে,
ঢাকায় খালেদা জিয়ার দফতরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রও খালেদা জিয়ার কাছে
বান কি মুনের চিঠি পৌঁছার খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তবে সূত্রটি জানায় যে,
মূল চিঠিটি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অনুরূপ একটি চিঠি খালেদা জিয়ার
কাছেও পাঠানো হয়েছে।জাতিসংঘ মহাসচিব
কবে নাগাদ অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারেন এ
প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, মহাসচিব পিস বিল্ডিং অফিসের
প্রধান অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে
লিয়াজোঁ করার জন্যে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি (তারানকো) এ কাজটিই করছেন।
মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রতি বদ্ধপরিকর।
আমরা প্রাণহানির নিন্দা জানানো অব্যাহত রেখেছি এবং মূল বার্তা হল, চলমান
সংকটের সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান।’গত
বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফর করার সময় অস্কার
ফার্নান্দেজ তারানকো ছিলেন জাতিসংঘের রাজনীতিসংক্রান্ত সহকারী মহাসচিব।
বর্তমানে তিনি এ বিশ্ব সংস্থার পিস বিল্ডিংসংক্রান্ত সহকারী মহাসচিব। তবে
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকোকে তার
বিশেষ দূত হিসেবে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন। ওই সংকট এখনও শেষ না হওয়ায়
তারানকোর ওপরই বাংলাদেশ বিষয়ে দায়িত্ব রয়ে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের
মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিয়মিত
ব্রিফিংকালে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব
ব্যক্তিগতভাবে বদ্ধপরিকর। তিনি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে এ ব্যাপারে
সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার জন্যে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন।’কূটনৈতিক
সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকেও জাতিসংঘে
যোগাযোগ করা হচ্ছে। অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো নিজে আগ্রহী হয়ে বাংলাদেশ
নিয়ে কাজ করার জন্যে মহাসচিব বান কি মুনের কাছে যান। মুন এতে সম্মতি জ্ঞাপন
করেন। - See more at:-www.24banglanewspaper.com