শিরোনাম
Loading...

news review 1

reveunis 2

Phone-Video

বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৫

কী অপরাধ ওদের?


অভি, মনোয়ারা যায় কিন্তু আর ফেরে না। অসময়ে অকারণে বিনা দোষে ওরা চলে গেল না ফেরার দেশে। অভির মায়ের আর্তনাদ, মনোয়ারার স্বামীর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ওদের স্বজনের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়তো কোনো দিনই থামবে না। কারণ, এমন মৃত্যু যে কারও কল্পনারও বাইরে। কী দোষ অভি, মনোয়ারা কিংবা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরও ১৫ জনের। কী অপরাধ তাদের যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। নিষ্ঠুর রাজনীতি কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবন। মায়ের কোল খালি করেছে, কাউকে করেছে পুত্রহারা, কেউবা স্বামীহারা, কেউ হারিয়েছে স্ত্রীকে। রাজনীতির একি নির্মম পরিহাস! মানুষের জীবন নিয়ে আর রক্তের হোলিখেলে ক্ষমতায় যাওয়ার এ কেমন কর্মসূচি। এরই নাম কি রাজনীতি। দেশে যদি রাজনৈতিক সংকট থেকেই থাকে তবে তা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করবেন রাজনীতিকরা। অন্য কেউ নয়। তাদের সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের বলি হবে কেন সাধারণ মানুষ? জীবনে রাজনীতি করেননি এমন একজন মানুষ কেন জীবন দেবে? আর যে শিশু পুড়ে কয়লা হল তার কী অপরাধ? সাফিরের ব্যান্ডেজ মোড়ানো মুখে যে সব প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে তার জবাব কে দেবে।রাজনৈতিক সংকট বারবার সৃষ্টি করবেন রাজনীতিবিদরা আর তার মাশুল দেবে জনগণ? জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হবে সাধারণ মানুষের? এটা আর কতকাল? রাজনৈতিক সংকটের নামে এই দেশে ৪৩ বছরে কত জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে? কত সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রাজনীতির নামে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ কত? এর হিসাব কি রাজনীতিবিদদের কাছে আছে? বলতে দ্বিধা নেই, রাজনৈতিক সংকটের কারণে নানা সময়ে ঘোষিত কর্মসূচিতে কতজন নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে, আর কতজন রাজনৈতিক নেতা অথবা তার পরিবারের সদস্যকে জীবন দিতে হয়েছে? সব সময়ই মরেছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতি হয়েছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর। ক্ষতি হয়েছে শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর। অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাকে এই সংকট মোকাবেলা করতে হয় না। কথাটা হয়তো কঠিন হয়ে গেল কিন্তু বাস্তব এবং সত্যটা এ রকমই নির্মম। কবির ভাষায়, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’।দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি এবং এরপর আন্দোলনের নামে আইনশৃংখলার সংকট সৃষ্টিই যেন রাজনীতি এবং ক্ষমতা দখলের মূল অস্ত্র। মানুষ এখন জানতে চায়, মানুষ পোড়ানো কি রাজনীতি, ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলার নাম কি আন্দোলন, ককটেল বোমাবাজি, আর পেট্রলবোমা কি জনগণের সমর্থন আদায়ের পথ? অন্যের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করে তাদের ওপর নির্যাতন কি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কণ্টকাকীর্ণ করা হয় না?অবরোধ শুরুর পর থেকে ১৬তম দিন পর্যন্ত দুর্বৃত্তের বুলেট আর যানবাহনে ছুড়ে দেয়া পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছে ২৯ জন মানুষ। পুড়ে গেছে বেশ কয়েকটি পরিবারের বেঁচেবর্তে থাকার অবলম্বন, কত মানুষের কত-শত স্বপ্ন। আগুনে শুধু শরীর পোড়েনি, মনও পুড়েছে। অনেকের মন ও দেহে দীর্ঘদিনের জন্য বড় ক্ষত তৈরি হবে। আগুনে পুড়ে বেঁচে যাওয়া শিশু ও মহিলাদের ট্রমাটাইজডে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও রয়েছে। ১৫তম দিনে আরও ৫ জনের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৬তম দিনে বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশে ২৭ গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে। এর আগে ১৫ দিনে ভস্মীভূত হয়েছে পাঁচ শতাধিক যানবাহন।অন্যদিকে যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। এ যৌথ অভিযানে অংশ নেবে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনী। তাদের সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করবেন ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিরা। বুধবার ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিশেষ বৈঠকে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়া হলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নাশকতা, বোমাবাজি ও আগুন নিয়ে মরণখেলায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে প্রায় ১১ হাজার লোকের একটি তালিকা নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় জীবনের এক চরমতম সংকটকালে উপনীত হয়েছে গোটা দেশ। সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ আভাসও সুস্পষ্ট।এ পরিস্থিতিতে আতংকিত দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। কোথায় যাবেন তারা। শান্তি ও স্বস্তির প্রত্যাশায় কার কাছে ফরিয়াদ জানাবেন। দেশের এ চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধু দেশগুলোসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব দেশই উদ্বিগ্ন। তাদের এ উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের কূটনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতিতে। বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এতটাই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, টানেলের শেষ প্রান্তেও আশার কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না কোথাও।ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এ জোটের ১৪ দল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকারী তথা মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিপক্ষ শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে অবরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সম্পর্ক এতটাই বিদ্বেষপূর্ণ রূপ নিয়েছে যে, তাদের মধ্যে সমঝোতার বিন্দুমাত্র কোনো আলোর উপস্থিতি দৃশ্যমান নয়। প্রধান দুই দলের নেতৃত্বে এখন একগুঁয়েমির ভূত সওয়ার হয়ে আছে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ দেখছেন না দেশের মানুষ। তারা এখন জিম্মিদশার মধ্যে অবস্থান করছেন। অবাধে চলাফেরার মৌলিক অধিকারটুকু থেকেও দেশের মানুষ এখন বঞ্চিত। পথ চলতে হচ্ছে প্রাণটুকু হাতে নিয়ে।এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না। দেশের মঙ্গলকামী শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পিঠ ক্রমেই দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। সবার মনে আতংক। সবার এখন একটাই ভাবনা, কী হয়, কী হবে। এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়www.24banglanewspaper.com

Related Post:

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

pop Earnings