বগুড়ায় পলিটেকনিক ছাত্র হত্যা
বগুড়ায়
থার্টিফার্স্ট নাইটে একটি বেসরকারি পলিটেকনিকের ছাত্র বাকিরুল্লাহ শেখ
বিপ্লবকে (১৮) গলাকেটে ও কুপিয়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। মোটরবাইক ও
মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতেই ৬ বন্ধু তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতার ৪
বন্ধুর মধ্যে তিনজন সোমবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হত্যাকাণ্ডের
লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এর আগে এক আসামির বাড়ি
থেকে মোবাইল ফোন এবং মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহীর কাটাখালির সাদেকের মোড়ে
পরিত্যক্ত অবস্থায় বাইকটি উদ্ধার করেন।
গ্রেফতার ৬ বন্ধু হল- বগুড়া শহরের
জলেশ্বরীতলার মৃত মিঠুর ফাহাদ ইবনে আরজু অন্তু (১৯), চকসুত্রাপুর
জহুরুলপাড়ার মৃত ইউনুস মোল্লার ছেলে সোহেল (২২), ছিলিমপুর মধ্যপাড়ার রুহুল
ইসলামের ছেলে তৌফিক (১৯) ও ছিলিমপুর উত্তরপাড়ার লিটন প্রামানিকের ছেলে
সাদ্দাম হোসেন (১৯)। এদের মধ্যে অন্তু ছাড়া অন্যরা স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দিয়েছে। অপর আসামি শাকিল ও নজরুল এখনও পলাতক রয়েছে।বগুড়ার
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারেকের কাছে
স্বীকারোক্তিতে আসামিরা জানায়, বগুড়া শহরতলির ছিলিমপুর উত্তরপাড়ার দুবাই
প্রবাসী রানা শেখের একমাত্র ছেলে বিপ্লব শহরের মফিজ পাগলার মোড়ের বিআইআইটি
নামে একটি বেসরকারি পলিটেকনিকের কম্পিউটার টেকনোলজির প্রথম সেমিস্টারের
ফাইনাল পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার আড়াই লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মোটরবাইক ও ৪৫
হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে পরিকল্পনা করা হয়। বন্ধুদের
সঙ্গে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য বিপ্লব ওইদিন বিকালে মায়ের কাছ
থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয় ও বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সে একটি পিকনিক
পার্টিতে অংশ নিতে জলেশ্বরীতলায় কালিমন্দিরের পাশে যায়। তার সঙ্গে বন্ধু
অন্তু ছিল। রাত ৮টার দিকে সাদ্দাম ফোন করে বিপ্লবকে ছিলিমপুর মধ্যপাড়ায়
ডেকে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে অন্তুও ছিল। অন্তুকে সেখানে রেখে সাদ্দাম ও
বিপ্লব উত্তরপাড়ায় একটি বাগানে ঢোকে। ভেতরে যাওয়ার পর সাদ্দাম, শাকিল,
সোহেল, তৌফিক ও নজরুল বিপ্লবকে ঘিরে ধরে। নজরুল ও তৌফিক পেছন থেকে রশি দিয়ে
বিপ্লবের গলায় ফাঁস দেয়। পড়ে গেলে তার হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। শাকিল
হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে ফেলে এবং সোহেল দা দিয়ে বিপ্লবের মুখসহ বিভিন্ন
স্থানে কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে ঘাতক বন্ধুরা বিপ্লবের বাইক, মোবাইল
ফোন ও পকেটে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বাইকটি শাকিলের হেফাজতে ছিল।পরদিন
সকালে পুলিশ ওই বাগান থেকে বিপ্লবের রক্তাক্ত লাশ ও পাশে হাসুয়া এবং রশি
উদ্ধার করে। জনগণ অন্তুকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ব্যাপারে নিহতের মা বিউটি
বেগম উল্লিখিত ৬ বন্ধুর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। পুলিশ প্রযুক্তির
সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। গত ৪ জানুয়ারি রাতে কোচে ঢাকায়
পালানোর সময় শেরপুর থেকে তৌফিককে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তিতে
রাজশাহীর আত্মীয় বাড়ি থেকে সাদ্দাম এবং বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর জহুরুলপাড়া
থেকে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। সোহেলের কাছে বিপ্লবের মোবাইল ফোন পাওয়া
যায়। অপর ঘাতক বন্ধু নজরুল ও শাকিল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।তদন্তকারী
কর্মকর্তা সদর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহীর
কাটাখালির সাদেকের মোড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় নিহত বিপ্লবের বাইকটি পাওয়া
গেছে। তিনি জানান, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। বন্ধুরা
মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতেই পরিকল্পিতভাবে বিপ্লবকে হত্যা করে। এ
হত্যাকাণ্ডে এজাহারে উল্লেখিত ৬ জন ছাড়াও অনেকে জড়িত আছে। ইতিমধ্যে
চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মোবাইল
ফোন ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। অবশিষ্ট আসামিদের শিগগিরই গ্রেফতার করা
হবে। www.24banglanewspaper.com