www.24banglanewspaper.comউত্তেজনার
পারদ চড়ছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর। রাজনৈতিক সংঘাতের আশংকা বাড়ছে
প্রতিনিয়ত। তীব্র প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই যে কোনো মূল্যে গাজীপুরে
নির্ধারিত জনসভা করতে বদ্ধপরিকর বিএনপি। আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর ভাওয়াল বদরে
আলম কলেজ মাঠে এই জনসভায় যোগ দেবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে বাধা
দিলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে একই স্থানে একই সময়ে
বিক্ষোভ সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ।
আগের দিনের মতো বৃহস্পতিবারও খালেদা জিয়ার
জনসভাস্থল ছাত্রলীগ দখল করে রাখে। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ও সমর্থক
জনসভাস্থলে ঢুকতে পারেনি। তবে দুপুরের দিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের
নেতাকর্মীরা চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-জয়দেবপুর রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের
করে। দুদলের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা
বিরাজ করছে। গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন
সীমিত আকারে চলাচল করতে দেখা গেছে। কলেজের আশপাশের মার্কেট ও বসতবাড়ির
লোকজন আতংকে ভুগছেন। পুরো নগরবাসীর মধ্যেই উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। দুদলের
নেতাকর্মীদের মধ্যে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে।জনসভা
হবে কিনা জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন
যুগান্তরকে বলেন, আমরা যে কোনো মূল্যে জনসভা করব। বাধা এলে প্রতিরোধ হবে।
কিন্তু আমরা পিছপা হব না। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম
বাবুল জানান, জনসভা সফল করতে বিএনপির সব প্রস্তুতি রয়েছে। তারা যে কোনো সময়
জনসভা মাঠে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু তারা চান না কারও সঙ্গে সহিংসতায়
জড়াতে।অপরদিকে মহানগর ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ জানান, ছাত্রলীগও যে কোনো মূল্যে
খালেদা জিয়ার গাজীপুরে আগমন প্রতিহত করবে। জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার
হোসেন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তারেক
রহমানের কটূক্তি প্রত্যাহার অথবা তাকে দল থেকে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত
খালেদা জিয়াকে গাজীপুরের মাটিতে কোনোভাবেই আসতে দেয়া হবে না।সার্বিক
পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার রাতে খালেদা জিয়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তার
গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এ সময় জনসভার বিষয়ে জেলা নেতাদের প্রস্তুতি
জানতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন। জেলা নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে
প্রতিহত করতে তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী পর্যালোচনার পর
সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়া গাজীপুর যাবেন এবং যেখানে বাধা দেয়া হবে সেখানেই
জনসভা হবে। এমনকি গাড়িবহরে হামলা হলে প্রতিরোধও হবে।এদিকে
করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের
শাহজাহানপুরের বাসায় বৈঠক করেন নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। একাধিক সূত্র
জানিয়েছে, ঢাকা থেকে ২০-৩০ হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সঙ্গে
যাবে। তারা চেয়ারপারসনের গাড়ি ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করবেন। প্রশাসনের পক্ষ
থেকে সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও খালেদা জিয়া জনসভাস্থলের দিকে
এগিয়ে যাবেন। যেখানে বাধা দেয়া হবে সেখানেই অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করবেন
তিনি। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশকে রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে থাকার
নির্দেশ দেয়া হবে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে
প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হবে। আজ এ বিষয়ে নগর বিএনপি
নেতাদের কাছে নির্দেশনা পৌঁছে যাবে। একইভাবে সারা দেশের প্রত্যেক মহানগর,
জেলা ও থানা-উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
দেয়া হবে।জানা গেছে, বুধবার
বকশিবাজারে বিশেষ আদালতের বাইরে রাজপথে থেকে ছাত্রলীগকে প্রতিহত করায়
সন্তুষ্ট খালেদা জিয়া। সারা দেশের নেতাকর্মীরাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন।
হামলা হলেও রাজপথ ছাড়েনি নেতাকর্মীরা, তাই এবার ঢাকায় আন্দোলন হবে- এমন
বিশ্বাসও সৃষ্টি হচ্ছে তাদের মধ্যে।এদিকে
গতকাল বিকালে গাজীপুর সিটি মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক
এমএ মান্নান ও জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা জনসভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার
জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চান। জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বিএনপি নেতাদের
জানান, জনসভার জন্য এখনও পুলিশি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়নি।ফজলুল
হক মিলন এ প্রসঙ্গে বলেন, জনসভার জন্য বিএনপিকে ভাওয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ মাঠ
ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও
এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠন একই
স্থানে একই সময়ে একটি সমাবেশ ডাকে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। এ
ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, দুপক্ষেরই আবেদন
পেয়েছি। কাউকেই অনুমতি দেইনি। তবে পুলিশের অনুমতি ছাড়া যদি কেউ সভা করার
চেষ্টা করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।গতকাল
সকালে ভাওয়াল কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের ভেতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ
মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে যেখানে খালেদা জিয়ার জনসভার জন্য মঞ্চ
তৈরির কথা ছিল সেখানে ছাত্রলীগের তৈরি করা একটি শামিয়ানার কাছে বসে পুলিশ
তা পাহারা দিচ্ছে। দুপুর ১২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হীরা
সরকার, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রকিব সরকার ও ভাওয়াল কলেজ শাখা
ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফাইজুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের
একটি বিশাল মিছিল মাঠে প্রবেশ করে। তারা পুলিশের সামনেই লাঠিসোটা নিয়ে কয়েক
দফা মহড়া দেয়। পরে কলেজের প্রধান ফটকের কাছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে
বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সারাদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ জনসভা মাঠে
অবস্থান করে।গতকাল সারাদিনেও বিএনপি ও
অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে মাঠের আশপাশে দেখা যায়নি। তবে মাঠের অদূরে
চান্দনা চৌরাস্তার আশপাশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সতর্ক
অবস্থানে ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের
নির্দেশে তারা মাঠের দিকে অগ্রসর হয়নি। তারা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মিছিল
করে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ,
যুবদল নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সরাফত হোসেন,
সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সকাল থেকেই অধ্যাপক এমএ
মান্নান, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল
আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পৌর মেয়র মজিবুর রহমান, হুমায়ূন
কবীর, পীরজাদা রুহুল আমিন, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার,
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের
কয়েক হাজার নেতাকর্মী চান্দনা চৌরাস্তার আশপাশে অবস্থান নেন।বিএনপি
নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপির পক্ষে মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও পুলিশ
জনসভার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল মাঠে ঢুকতে দিচ্ছে না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সে
জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আর পুলিশ তা বসে বসে পাহারা দিচ্ছে।কালিয়াকৈরেও
মুখোমুখি অবস্থান : কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি সরকার আবদুল আলীম
জানান, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে কালিয়াকৈরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বেশ চাঙ্গা
হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মিটিং মিছিল আর সমাবেশ হচ্ছে। দুদলই বিভিন্ন কর্মসূচির
মাধ্যমে আবার সরব হয়ে উঠেছে। দুদলই গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা
ঘোষণা করেছে।দলীয় সূত্রে জানা যায়,
কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ৯টি ইউনিয়ন থেকে ১৮টি গাড়ি নিয়ে
সভাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সভাপতি
হুমায়ুন কবির খান বলেন, ২৭ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোটের জনসভাকে সফল করতে
কালিয়াকৈর বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ
বাধা দিলে তা মোকাবেলা করা হবে।উপজেলা
ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, যে কোনো মূল্যে ওই সমাবেশ
প্রতিহত করে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করা হবে। উপজেলা যুবলীগের
আহ্বায়ক হিরু মিয়া বলেন, যুবলীগ মহাসড়কের সর্বত্র অবস্থান নেবে। বিএনপির
সভাস্থলে কাউকে যেতে দেয়া হবে না।খালেদা
জিয়ার জনসভা অবশ্যই হবে- হান্নান শাহ : সরকার যতই বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি
করুক না কেন, সব উপেক্ষা করে শনিবার খালেদা জিয়ার জনসভা অবশ্যই অনুষ্ঠিত
হবে। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে গাজীপুরের এ বিশাল জনসভা বানচালে নানা
পাঁয়তারা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার
ঘাগটিয়ায় নিজ বাড়ির আঙিনায় কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান
খন্দকার আজিজুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান
চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিমসহ পাঁচ সহস্রাধিক
নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।গাজীপুরে
বাধা দিলে সারা দেশে সমাবেশ- গয়েশ্বর : গাজীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার জনসভা ঠেকাতে ছাত্রলীগের হুমকির জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ২৭ ডিসেম্বর আমরা গাজীপুর যাবই। আমরা কারও
পৈতৃক ভিটায় বাস করি না যে গাজীপুরে যেতে পারব না। সরকারকে বলতে চাই,
গাজীপুরে আমাদের সমাবেশ করতে না দিলে সেদিন সারা দেশে সমাবেশ হবে। গাজীপুরে
রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হলে সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।বৃহস্পতিবার
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে স্বাধীনতা ফোরামের এক আলোচনা সভায় তিনি
এসব কথা বলেন। ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে
এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা
খায়রুল কবীর খোকন, মীর সরফত আলী সপু, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ
বক্তব্য রাখেন।জনসভা সফল করতে ইসলামী
ঐক্যজোটের সভা : ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে
ইসলামী ঐক্যজোট গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটি। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে
জেলা কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যে কোনো পরিস্থিতিতে সমাবেশ
সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী
ঐক্যজোট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, গাজীপুর
মহানগর সভাপতি মুফতি আবদুল মান্নান, গাজীপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা
ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।