সকালে সাত ওভার খেলার পরই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তৎপর হতে দেখা গেল
মাঠকর্মীদের। তামিম ইকবাল আলাপও করলেন আম্পায়ারদের সঙ্গে। হয়তো
বাংলাদেশের দর্শকদের মুখেও তখন খানিকটা হাসির রেখা ফুটেছিল! বৃষ্টির
সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এ ম্যাচ বাঁচানো যে ছিল রীতিমতো হিমালয়
জয় করার মতোই।
হ্যাঁ, হিমালয় জয়ই। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে
পদে পদে বিপদ। জয় করতে হয় ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধতা। ঢাকা টেস্টের প্রথম তিনটা
দিনের গতিপ্রকৃতি ম্যাচটাকে ওই পর্যায়েই নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খুলনা
টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের বীরত্বগাথা হয়তো অনেকের মনেই প্রত্যাশার পারদ
চড়িয়ে থাকতে পারে। কিন্তু খুলনা কী প্রতিদিন ফিরে আসে?
স্বাভাবিকভাবেই
খুলনার পুনরাবৃত্তি ঢাকায় হয়নি। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে
বাংলাদেশের রানটা প্রথম ইনিংসের চেয়ে একটু বেশি হলেও টেস্ট বাঁচানোর মতো
হয়নি। পাকিস্তানের বেঁধে দেওয়া ৫৫০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হার ৩২৮ রানের। এটি টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের
চতুর্থ বৃহত্তম হার। রানের হিসাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই সবচেয়ে বড়
হার।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে ২২১ রানে। মুমিনুল হকের ব্যাট
থেকে এল সর্বোচ্চ ৬৮ রান। তামিম করলেন ৪২। শুভাগত হোম শেষ দিকে পরাজয়ের
ব্যবধান কমানোর কাজটাই করলেন, ৩৯ রান করে। কিন্তু ম্যাচ বাঁচানোর যে
প্রত্যয়, যে মানসিকতার দরকার সেটাই অনুপস্থিত থাকল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।
সকালেই
গতি, বাউন্সারে তিন পাকিস্তানি পেসার বেশ চেপে ধরেছিলেন বাংলাদেশকে। সঙ্গে
ছিল ইয়াসির শাহর ঘূর্ণি। তবে পাকিস্তানি বোলারদের চেয়ে বাংলাদেশের
ব্যাটসম্যানদের দায়টাই বেশি। ম্যাচের এ পরিস্থিতিতে এভাবে উইকেট ছুড়ে
দেওয়ার আদৌ কি প্রয়োজন ছিল? আগের দিনের সেট ব্যাটসম্যান তামিম
ইকবাল ইমরান খানের বাইরের বলটা ওভাবে না চালালেও পারতেন। অবশ্য তিনি বলতে
পারেন, ওই ধরনের বলে এমন শটে অনেক সময় বাউন্ডারি এসেছে। কিন্তু ম্যাচের
ত্রাহি দশায় ধৈর্যটা বড্ড প্রয়োজন ছিল। তামিমকে ফিরিয়ে ইমরানের বুনো
উল্লাস কি একটুও আক্ষেপ তৈরি করবে না তাঁর মনে? গোটা সিরিজে যে দলটার
বিপক্ষেই একের পর এক বীরত্বগাথা রচনা করেছেন, তাদের বিপক্ষেই কিনা শেষটা
হলো এমন ধূসর, ভুলে যাওয়ার মতো! অসহায় দৃষ্টিতে দেখতে হলো হৃদয়
এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়া প্রতিপক্ষের বাঁধনহারা উদ্যাপন।
তামিমের না
হয় যুক্তি আছে; মাহমুদউল্লাহ কী যুক্তি দাঁড় করাবেন? পাকিস্তানের বিপক্ষে
একটি বড় ইনিংস তো দূরে থাক, ফিফটিও তো পেলেন না। সব আত্মবিশ্বাস কী তবে
তিনি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ফেলে এসেছেন? তামিমের মতো মাহমুদউল্লাহর
আউটের ধরন অনেকটাই এক। ইমরান খানের বাইরের একটি বল চালাতে গিয়ে ফিরেছেন
দৃষ্টিকটুভাবে।
ব্যাটিংয়ে নামার সময়ই গ্যালারিতে ‘সাকিব-সাকিব’ রব
উঠল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতো এবার আর বুক চিতিয়ে লড়াই করতে দেখা গেল না
টেস্টের এক নাম্বার অলরাউন্ডারকে। সবাইকে হতাশায় ডুবিয়ে মোহাম্মদ
হাফিজের বলে ফিরলেন ১৩ রানেই। এমনিতেই টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার মতো
বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ভীষণ চাপের মুখে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সে
চাপেই কি নিজের স্বাভাবিক খেলাটাও ভুলে বসলেন মুশফিক? প্রথম ইনিংসের মতো
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ! দলের বিপদকে আরও ঘোরতর করে ফিরলেন ডাক মেরে!
বাংলাদেশের
অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের যা একটু আলো ছড়িয়েছেন মুমিনুল হক। ইয়াসির
শাহর বলে ফেরার আগে সর্বোচ্চ ৬৮ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। আরেকটি
কীর্তিও গড়লেন এ বাঁহাতি। টানা ১১ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে মুমিনুল
এখন বীরের সেবাগ, গৌতম গম্ভীর ও ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসের
পাশে। মুমিনুলের সামনে কেবল বাকি এবি ডি ভিলিয়ার্স। সবচেয়ে বেশি টানা ১২
টেস্টে পঞ্চাশের বেশি ইনিংস খেলার রেকর্ড ডি ভিলিয়ার্সের। নিঃসন্দেহে
সেটিও এখন হুমকির মুখে। সেটা ফেলে দিয়েছেন মুমিনুলই।
মুমিনুলের ব্যাটিং
ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে নায়ক পাকিস্তানি বোলাররাই। বিশেষ করে ইয়াসির শাহ।
৭৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি বলতে গেলে একাই শেষ করে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
ইমরান খান ৫৬ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ওয়াহাব রিয়াজ, জুনায়েদ খান আর
মোহাম্মদ হাফিজের ঝুলিতে গেছে একটি করে উইকেট।
পাকিস্তানকে ওয়ানডে
সিরিজে ধবলধোলাই করার পর একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও জয়। প্রথম টেস্টে
নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ঘুরে দাঁড়িয়ে গৌরবের ড্র। রীতিমতো আকাশেই উড়ছিল
বাংলাদেশ দল। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার
আগে আত্মবিশ্বাসটাও ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু বিশাল এই হারে হঠাৎ করেই
উত্তপ্ত জমিন বাংলাদেশের পায়ের তলায়। জমিনের সেই উত্তপ্ততা যেন নতুন করে
জানিয়ে দিচ্ছে সেই কথাটা, ক্রিকেটে অনেক দূর এগিয়েছি আমরা, যাওয়ার আছে
এখনো অনেক পথ। ঢাকা টেস্টের পরাজয় উন্নতি করার জায়গাগুলো যে নিয়ে আসল
আতসী কাচের তলায়।more-www.24banglanewspaper.com
