শিরোনাম
Loading...

news review 1

reveunis 2

Phone-Video

বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৫

সুরের মূর্ছনায় শেষ হলো সুফি উৎসব

সুরে সুরে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। সেই রাতের দোলাচলে দুলছে মাঘী শীতের হিমেল হাওয়া। মঞ্চজুড়ে সংগীতে সংগীতে আরাধনা আর নীলবর্ণ আলোর উচ্ছলতা। ‘সুফি ফেস্ট ২০১৫’-এর তৃতীয় ও শেষ দিনে মরমি সুরের ঝরনাধারায় গতকালও আকুল সবাই। তাঁদের অভিব্যক্তিই বলছে, ‘আহা, কী ভালোই না লাগছে সহজ সুরের মূর্ছনা!’ না, বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দিনভর হরতালের গুমোট আবহাওয়া, উত্তেজনা—এখানে কিছুর লেশমাত্র নেই। মুগ্ধ শ্রোতাদের কেউ কেউ মুদে আছেন চোখ, কেউবা আরেকটু নিমগ্ন—সুরের খেয়ায় ভেসে, নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে খুঁজে চলেছেন পরমকে। কারও কাছে সমর্পণেই যেন শান্তি! বিজয় সরণির সামরিক জাদুঘর মাঠে তিন দিনব্যাপী সুফি উৎসবের শেষ দিনে কালকের চিত্রটিও ছিল এমন সুরেলা, গীতিময় মণিমাণিক্যে ভরপুর।
শেষ দিনের আয়োজন শুরু হলো একটু দেরিতেই, সাড়ে ছয়টায়। আলোঝলমল মঞ্চে উঠল ডেনমার্কের সুফি গানের দল সেরেনাস। দলের প্রধান শিল্পী সেরেনার নেতৃত্বে তাঁরা সুফি ঘরানার বৈচিত্র্যময় গানের মধ্য দিয়ে মেলে ধরলেন ইউরোপের ভক্তিমূলক আধ্যাত্মিক গানের অনুপম সংগ্রহ। তবে এসব গানে শুধু ইউরোপের অধ্যাত্মবাদই নয়, শেষমেশ উঠে এল প্রাচ্যের গানও। পরিবেশনার শেষে যখন তাঁরা গাইলেন ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’, আমাদের মনে পড়ে গেল, আরে এ গানটি তো নুসরাত ফতেহ আলী খান গেয়েছেন! হ্যাঁ, এ গানটি তাঁরা উৎসর্গও করলেন ফতেহ আলীকে। এ গান পরিবেশনার সময় সেরেনার মুখের কয়েক টুকরো কথা হুবহু তুলে দিচ্ছি, ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’-এর এটি হলো ইউরোপীয় সংস্করণ। শুনতে হয়তো একটু ভিন্ন রকম লাগবে। উপমহাদেশের শ্রোতাদের জন্য এটি আমাদের উপহার।’
এরপর নীরবতা—১০ মিনিট বিরতি। ঘড়ির কাঁটায় আটটা তিন মিনিট। ‘জিকর’ নামে স্পেনের দলটি এল মঞ্চ মাতাতে, সঙ্গে থাকলেন ক্যারেন রুমি। ‘ক্যারেন রুমি অ্যান্ড ইয়ুথ’-এর নৃত্যগীতের অপূর্ব মাধুর্যে এই পরিবেশনায় উঠে এসেছে আন্দালুসিয়া অঞ্চলের লোকসুরের মহিমা। পরিবেশনার নানা পর্বে মরোক্কান বংশোদ্ভূত গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী ক্যারেন রুমি কখনো নাচের ছন্দে, সংগীতের শব্দে ও সুরের ঐন্দ্রজালিক ওঠানামায় মোহাবিষ্ট করে রাখেন দর্শকদের।
তবে ক্যারেন শুধু একাই পরিবেশনা চালিয়ে গেলেন এমন নয়; একসময় পরিবেশনার সঙ্গে দর্শকদের যুক্ত করলেন তিনি। ক্যারন গাইছেন, এর সঙ্গে সংগত করছেন হাজার খানেক শ্রোতা—দৃশ্যটি সত্যিই মনোরম। ৮টা ৪৪ মিনিটে শেষ হলো জিকরের পরিবেশনা।
বাংলাদেশের শিল্পী লাবিক কামাল মঞ্চে এলেন নয়টা বাজার একটু পরেই। এ সময় তিনি ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’সহ বেশ কয়েকটি গান শোনালেন শ্রোতাদের। পরিবেশনার সময় তিনি মঞ্চে ডেকে নিলেন নবনীতা চৌধুরীকে। নবনীতার গান শুনলেন উৎসবে আসা শ্রোতারা।
এরপর অপেক্ষার গল্পের শুরু, কারণ একটু পরেই মঞ্চ আলো করবেন রাহাত ফতেহ আলী খান। অপলক চোখে সেই মুহূর্তে প্রতীক্ষা সবার। রাহাত আসার আগে মঞ্চে উঠলেন তাঁর সহযোগী সালমান আহমেদ। তিনি বাংলাদেশিদের অভিবাদন জানালেন গোটা দলের পক্ষ থেকে। পরিচয় করিয়ে দিলেন বাদকদের সঙ্গে। এরপর রাহাত ফতেহ আলী শুরু করলেন কাওয়ালি ‘তেরি সনকে খুদা বন্দে’। গান শুরু করার আগেই জানালেন, প্রথমে কাওয়ালি গাইলেও পরে মেটাবেন শ্রোতাদের অনুরোধ। কথা রেখেছেন তিনি। সুরেলি আঁখিওয়াল, ক্যায়সা হে ইশক হ্যায়, পিয়ারে ও পিয়ারের মতো বলিউডের জনপ্রিয় গানও গেয়ে শোনান। একের পর এক সুরের বিচিত্র খেলায় শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করেন নুসরাত ফতেহ আলী খানের এই উত্তরসূরি। রাহাতের গান, সঙ্গে শ্রোতার মুহুর্মুহু করতালি—যুগলবন্দীটি ছিল এমনই।
এর আগে যখন মঞ্চে এলেন তিনি, মুহূর্তেই আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন দর্শক। দর্শকের করতালি সে সময় যেন উপচে পড়ছে উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত শিল্পীর জন্য।
ব্লুজ কমিউনিকেশনস আয়োজিত, আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত তিন দিনের সুফি গানের এই উৎসবে অংশ নিয়েছিল আটটি দেশের ১৫টি দল ও শিল্পী। উৎসবের তিন দিনে মরমি গানের আয়োজনে শীতের রাতগুলো যেন হয়ে উঠেছিল বর্ণিল। অস্থির রাজনৈতিক এই সময়ে এ যেন ছিল কিছু সময়ের জন্য মঙ্গলবারতা।more-www.24banglanewspaper.com

Related Post:

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

pop Earnings