চিরদুখি যে মা তার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে
তিল তিল করে একটি সন্তানকে বড় করে তোলে সেই নাড়ি ছেড়া ধন সন্তান যদি মায়ের
মৃত্যুতে নিজের স্বার্থের কারণে সেই ভালোবাসা বেমালুম ভুলে যায় , এমনকি
মৃত মায়ের লাশ আটকে রেখে দাবী তোলে নশ্বর সম্পত্তির তাহলে কি মেনে নিতে
পারে কেও ?
নিজের মা মারা গেছে, এ সংবাদ শোনার সঙ্গে
সঙ্গে নিজের অজান্তেই সন্তান-স্বজনরা কেঁদে ওঠেন। এমন দৃশ্যইতো এতদিন দেখে
এসেছি । কিন্তু এর ব্যতিক্রম হয়ে যদি এমন হয়, মা মারা যাওয়ার পর তার লাশ
দাফনে বাধা দিয়ে লাশ রাস্তায় ফেলে রাখে তারই স্নেহের সন্তানরা তাহলে কেমন
হয়?
সবাইকে অবাক করে দিয়ে এমনই এক কলংকিত ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বাধাইড় ইউনিয়নের বহরইল গ্রামে।
যেখানে মায়ের মৃত্যুর পরে জমি ভাগাভাগি নিয়ে দুই ছেলে মায়ের লাশ দাফনে বাধা দিয়ে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা মায়ের লাশ রাস্তায় ফেলে রাখে।
এর আগে আজ সোমবার সকালে মেয়ে নুর বানুসহ গ্রামবাসী লাশ মুন্ডুমালা থেকে গ্রামের বাড়ি বহরইল গ্রামের দাফনের জন্য নিয়ে আসেন।
অবশেষে পুলিশ গিয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সোমবার দুপুরে সাহাজাদি বেওয়া নামে ওই বৃদ্ধার লাশ দাফন সম্পন্ন করে।
মা জীবিত থাকতে তাদের অসদাচরনের কারণে শত
চেষ্টা করেও জমি নিজেদের নামে লিখে নিতে না পাড়ায় বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এবং
তাদের স্ত্রীরা মিলে এই অসহায় মায়ের লাশ দাফনে বাধা দেয়।
একমাত্র বোনের কান্না , গ্রামবাসিদের
অনুরোধ কোন কিছুই টলাতে পারেনি এই দুই পাষণ্ড এবং তাদের স্ত্রীদের । সময়
গড়াতে থাকায় বিষয়টি আরও বেশি জটিল হতে থাকে। পরে গ্রামবাসীরা বিষয়টি
পুলিশকে জানায়।
খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় লাশ দাফন করে।
এদিকে পুলিশ আসার খবর পেয়ে ওই দুই ভাই গ্রাম থেকে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,আরও ভয়ানক কিছু
তথ্য, তানোর উপজেলার বহরইল গ্রামের মৃত-মানিক উদ্দীনের স্ত্রী সাহাজাদির
নামে ১০ বিঘা জমি ছিলো । ওই জমি বড় ছেলে সামসুদ্দীন ও ছোট ছেলে কাউছার
তাদের নিজ নামে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। শত কৌশলে হুমকি-ধামকিতে না পেরে সবিশেষ
গত ১৫ দিন আগে তাদের মাকে দুই ভাই মিলে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
কুল-কিনারা না পেয়ে অসহায় ঐ বৃদ্ধা সাহাজাদি মুন্ডুমালায় এক দূর সম্পর্কের
আত্মীয়ের বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয় এক গ্রাম্য
চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃদ্ধ ঐ মায়ের যে মানসিক ও শারীরিক
অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছিলো তার জন্য হয়ত প্রয়োজন ছিল উন্নত চিকিৎসার । পরিবারে
এই পাষণ্ড দুই সন্তান আর এক মেয়ে ছাড়া আপন কেও ছিলোনা বৃদ্ধার। তাই একটু
ভালো চিকিতসা না পেয়েই এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে অবশেষে গতকাল রোববার ওই বৃদ্ধা
মা ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে । গত ১৫ দিনে একবার দেখতে আসাতো দুরের কথা , এমন
মৃত্যুর সংবাদে একটুও কাঁদেনি ওই দুই ছেলের মন। কোন অপরাধবোধও ছিলোনা ঐ
পাষণ্ড সন্তানদের । ছেলেরা না কাদলেও একমাত্র সম্বল মাকে হারিয়ে অঝোরে
কেঁদেছে বৃদ্ধার অসহায় মেয়ে ।www.24banglanewspaper.com