যদি তা-ই হবে; তুলসী, দুর্গা, আরজ আলী, আবির আহমেদ চরিত্রগুলো হলে বসা দর্শকের হাত ধরে একটা সবুজ-সুন্দর গ্রামে নিয়ে গেল কী করে? গল্পটা জমে উঠতেই যা একটু সময় লাগল, তার পর থেকে পর্দার দিকে রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে থাকতে হলো কেন? রহস্য, টানটান উত্তেজনা, সঙ্গে আবহ সংগীতের ওঠানামায় বুক ঢিপঢিপ করল কেন? হায়, ইংরেজি ছবি দেখতে ভিড় করা তরুণদের জানা হলো না, একটা দারুণ চমক তারা পাশ কাটিয়ে গেলেন!
শুরুতে বয়োজ্যেষ্ঠ বটগাছটাকেই মনে হচ্ছিল ছবির মূল চরিত্র। এই গাছ ঘিরেই যত রহস্য। গ্রামের লোকে বলে, গাছটার নাকি ‘দোষ’ আছে। দোষী গাছের নিচেই তো রহস্যজনকভাবে একে একে মারা পড়ল কয়েকজন। গ্রামের হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আরজ আলীর (আজাদ আবুল কালাম) মতো কেউ কেউ বললেন, ‘বাখওয়াজ! এটা কি আফ্রিকার মানুষখেকো গাছ, যে মানুষ খাবে?’ এই মৃদু প্রতিবাদ গ্রামের লোকের কাছে ধোপে টেকে না। টিক তোও না। যদি-না গ্রামে পা রাখতেন একজন পাস করা ডাক্তার-আবির আহমেদ (ফেরদৌস)। না, ভৌতিক কিছু নয়। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ডাক্তারই প্রথম শব্দটা উচ্চারণ করলেন-‘মার্ডার’! কে, বা কারা করছে এই খুন? কেন? গাছের চেয়েও রহস্যময় যে নারী চরিত্র দুর্গা (সোহানা সাবা), শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর তাঁর কান্নাটা একটু মেকি লাগল কি? দুর্গার স্বামী তুলসী (ইন্তেখাব দিনার), লোকটা কেন একটু বেশিই চুপচাপ? দুর্গার সঙ্গে ডাক্তারের যে ‘মৃদু পরকীয়া’, সেটাও কেমন ধোঁয়াশা তৈরি করে। সব প্রশ্নের উত্তর খোলস ছাড়াবে ধীরে ধীরে।
ছবির সিনেমাটোগ্রাফি চমৎকার! এত সুন্দর একটা লোকেশন খঁুজে বের করার জন্যও পরিচালক মুরাদ পারভেজ বাহবা পেতে পারেন। তবে সবচেয়ে মুগ্ধ করার মতো তাঁর সংলাপ। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ডাক্তার যখন বলেন, ‘এবার কিন্তু সত্যিই চোরা জ্বর আসবে।’ খিলখিল করে হেসে দুর্গার জবাব, ‘আসলি আসুক। ডাক্তার আছে কী করতি?’ কিছু না বলেও কত কিছু বলা হয়ে যায়! ছবির প্রত্যেক কলাকুশলীর নিপুণ অভিনয়দক্ষতার জন্যই বোধ হয়, মাঝখানে পুলিশ চরিত্রের অভিনয়টা একটু দুর্বল মনে হলো। গ্রামের লোকের হাতাহাতি শুরু হতে না হতেই তিনি বোধ হয় ফাঁকা গুলি না ছুড়লেও পারতেন। তবু, পুরো ছবির মুনশিয়ানা শুরু থেকে শেষ অবধি যে বিনোদন দিল, তার কাছে এসব তুচ্ছ। হলের ভেতর দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁকা আসনগুলোই যা একটু কষ্ট দিল৷