শিরোনাম
Loading...

news review 1

reveunis 2

Phone-Video

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

সন্তান যখন অপরাধী

এক.
মাত্র বছর খানেক হলো ২৬ বছর বয়সী সাদিদ (ছদ্মনাম) যোগ দিয়েছে একটি সরকারি প্রকল্পে। হঠাৎ একদিন তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হলো বিভাগীয় তদন্ত। সেই তদন্তে প্রমাণিত হলো তিনি আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তিনি অপরাধ স্বীকার করলেন। জেলে যাওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো গতি নেই। তরুণ ছেলের অপরাধ দেখে মা-বাবা দারুণভাবে ভেঙে পড়লেন।
দুই
২১ বছর বয়সী নাইমুলের (ছদ্মনাম) মা-বাবার সমস্যা একটু ভিন্ন। তাঁরা একদিন জানতে পারলেন, নাইমুল তাঁর সহপাঠী ও প্রেমিকার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও অন্যায় করেছেন। প্রেমিকার সঙ্গে ধারণ করা কিছু ব্যক্তিগত ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মেয়েটি ও তার পরিবার দুর্বিষহ অবস্থায় আছে এবং আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। সন্তানের এমন অপরাধের কথা শুনে তাঁর মা-বাবা ভেঙে পড়েন।
দুটি ক্ষেত্রেই মা-বাবার অবস্থা প্রায় এক। তাঁরা একদিকে সন্তানের অপকর্ম কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না আবার প্রিয় সন্তানকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতেও চান। এ ধরনের অবস্থায় পড়তে পারেন যেকোনো মা-বাবা কিংবা অভিভাবক। তখন কীভাবে সামলাবেন এই নাজুক পরিস্থিতি?
সবার আগে বাবা-মাকে মানসিকভাবে সুস্থির হতে হবে। বিপর্যস্ত মন নিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করতে চাওয়াটা কার্যকরী নয়। এরপর তাঁদের পরস্পরকে একটি একক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, এ সময় একে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকেন এই বলে যে সন্তানের এই অবস্থার জন্য অন্যজনই দায়ী। এমনটা না করে একসঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা বিষয়টি লুকিয়ে রাখেন, যদিও বিষয়টি প্রচার করার মতো নয়, তবু প্রয়োজনীয় মানুষজন যেমন আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করতে হবে।
অপরাধ করে ফেলা সন্তানের সঙ্গে এ সময় কোনো রূঢ় আচরণ করা যাবে না। আবার তার অপরাধের পক্ষও নেওয়া যাবে না। তাকে কঠোরভাবে শাসন করবেন না, শারীরিক নির্যাতন করবেন না, আবেগপ্রবণ হয়ে তাকে অভিসম্পাত করবেন না, বাড়ি থেকে চলে যেতে আদেশ দেবেন না। সন্তানের সঙ্গে তার অপরাধের বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। কেন এবং কীভাবে সে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে, তা জানার চেষ্টা করুন। তাকে বুঝতে দিন যে কাজটি অত্যন্ত অন্যায়ের, তাই তাকে অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দিন।
মানসিকভাবে সন্তানকে সাহায্য করুন, কিন্তু কখনোই তার অপরাধটিকে সমর্থন করবেন না। তাকে লুকিয়ে রাখবেন না বা পালিয়ে যেতে পরামর্শ দেবেন না। এতে জটিলতা আরও বেড়ে যাবে।
আইনি সহায়তা সে পেতেই পারে। এরপর তার যদি কোনো দণ্ড হয়, তবে তা মেনে নিতে তাকে পরামর্শ দিন, এতে সে সংশোধিত হয়ে যেতে পারে।
অনেক সময় কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে সে অপরাধ করে ফেলতে পারে—সেসব ক্ষেত্রে কখনোই সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না। একে তো সে অপরাধ করেই ফেলেছে, তার ওপর মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগহীনতা তাকে আরও নতুন ভুল ও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলবে। তাকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখুন এবং আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করার সুযোগ দিন।
সন্তানকে বুঝতে দিন যে সে যা করেছে, তা অন্যায় এবং আপনি তার অন্যায়কে কোনোভাবেই সমর্থন করছেন না। একদিকে আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবেন আবার মা-বাবা হিসেবে সন্তানের মনের অবস্থাও আপনাকে বুঝতে হবে।
আপনার আচরণে এমন কিছু প্রকাশ পাবে না, যাতে সন্তান নিজেকে পরিত্যক্ত বোধ করে। সে যেন মনে না করে মা-বাবা তাঁর অপরাধের জন্য তাঁকে পরিবারচ্যুত করেছেন। আবার এ-ও যেন মনে না করে যে সে যা করেছে ঠিকই করেছে। এ ধরনের একটি ভারসাম্যমূলক আচরণ মা-বাবার করতে হবে। সন্তানের অপরাধের কারণে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের প্রতি সহমর্মী হোন, পরিস্থিতি বুঝে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সবকিছুর পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ে বাবা-মাকে নিশ্চিত হতে হবে যেমন সন্তান কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার কি না, সে সত্যি সত্যি এই অপরাধ করেছে, নাকি তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
হঠাৎ করে কিছু শুনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় সন্তান কোনো জটিল মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং তার সেই অপরাধমূলক আচরণগুলো মানসিক সমস্যারই লক্ষণ। সে ক্ষেত্রে মানোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কী করবেন বুঝতে না পেরে বাবা-মা হতবিহ্বল হয়ে পড়তে পারেন, তখন পরিবারের নির্ভরশীল কোনো সদস্য বা মানোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
আর প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক কার্যকরী। তাই সন্তান যাতে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। ছোটখাটো অনৈতিকতা একসময় বড় অপরাধের জন্ম দেয়, তাই ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে নৈতিকতার শিক্ষা দিন এবং পরিবারে নীতিবোধের চর্চা করুন।
লেখক: মনোরোগ বিশেষজ্ঞwww.24banglanewspaper.com

Related Post:

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

pop Earnings