কে হচ্ছেন এনবিআর চেয়ারম্যান
কে হচ্ছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান? চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকার বিশাল রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এনবিআরের চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার। অর্থমন্ত্রী লিখিতভাবে যে নাম প্রস্তাব করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন ক্যাডারের সচিবরা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জানুয়ারি। আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম। এ অবস্থায় দক্ষ এই চেয়ারম্যানকেই আবার ৬ মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে না নতুন মুখ আসছে- এ নিয়ে রাজস্ব প্রশাসনের সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কাউকে এনবিআর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিলে শুল্ক, ভ্যাট, আয়করের জটিল সব তত্ত্ব বা তথ্য বুঝতেই কমপক্ষে ৪ মাস পার হবে। সামনে রাজস্ব আদায়ের বিশাল চ্যালেঞ্জ আর নতুন বাজেট প্রণয়নের বাস্তবতা- এ বিবেচনায় খোদ সরকারও স্পর্শকাতর এই পদের নিয়োগ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে। তিনি জানিয়েছেন, দেশে ৮ বা ১১ জানুয়ারি ফিরতে পারেন। দেশত্যাগের আগেই এনবিআর চেয়ারম্যান কাকে করা হবে সে বিষয় নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। অপর সূত্র জানায়, আগের প্রস্তাব অনুযায়ী ফরিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব না হলে রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতায় বর্তমান চেয়ারম্যানের নিয়োগ আরও ৬ মাস বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে ৪ জানুয়ারি তিনি জনপ্রশাসনে আরেকটি ডিও লেটার দিয়েছেন। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আজ-কালের মধ্যেই নতুন চেয়ারম্যান না পুরনো চেয়ারম্যান সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।সিপিডির দাবি অনুযায়ী বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে- এ আশংকার মুখে ভবিষ্যতে সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদের জোগান বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই বাস্তবতায় এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে গভীর সংকটে সরকারের নীতিনির্ধারকরা।রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, নতুন একজন চেয়ারম্যানকে আয়কর, ভ্যাট আর শুল্ককর আইন বুঝতেই কয়েক মাস সময় পার করতে হবে। এদিকে চলতি বছরের বিশাল অংকের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন অর্থবছরের বাজেট সংসদে পেশ করতে হবে। এই বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া আগামী মাস থেকেই শুরু করতে হবে। এসব বিবেচনায় নতুন কাউকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে সরকারের জন্য আÍঘাতী। এতে চলতি অর্থবছরের উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আদায়ের ঝুঁকি আরও বাড়বে।দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জানুয়ারি। এর আগে তাকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় গত মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআরের সদস্য শুল্কনীতি ফরিদ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পত্র দেন। এর আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফরিদ উদ্দিন কাস্টমস ও এক্সাইজ ক্যাডারের ১৯৮৩ ব্যাচের কর্মকর্তা। এই ব্যাচে তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র। তার জুনিয়ররা সবাই সচিব। প্রশাসনে ১নং বেতন গ্রেডে সচিব পদমর্যাদার এই মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তার পুরো রাজস্ব প্রশাসনেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।তবে ফরিদ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান নিয়োগে অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন ক্যাডার। তারা চাচ্ছে প্রশাসন থেকেই রেওয়াজ অনুযায়ী এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে হবে। এ জন্য তারা বর্তমান পরিবেশ ও বন সচিব এবং বাণিজ্য সচিবের নাম বিবেচনা করছেন। আর তা না হলে রাজস্ব প্রশাসনেরই আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল কাদের সরকারের নিয়োগের পক্ষে সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ। আবদুল কাদের সরকার আয়কর ক্যাডারে এনবিআরের সদস্য থেকে রাষ্ট্রপতির কোটায় পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন সচিব হিসেবে কাজ করছেন। এই কর্মকর্তারও রাজস্ব প্রশাসনে বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।তবে অধিকাংশ আয়কর কর্মকর্তা মনে করেন, গোলাম হোসেন কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের কর্মকর্তা। এবার আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তাকেই এনবিআর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া উচিত। কাদের সরকার আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তার পরিচিতি আছে। বিসিএস ট্যাক্সেশন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা অন্যান্য শীর্ষ ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য। তবে তাকে নিয়ে রাজস্ব প্রশাসনে কিছুটা বিতর্ক আছে। অর্থমন্ত্রী নিজেও এই কর্মকর্তাকে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে পছন্দ করছেন না। তার এমন নিয়োগ প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী এখনও হার্ডলাইনে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।সার্বিক এই মেরুকরণে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে গোলাম হোসেনকেই আরও ৬ মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার এ ধরনের পদে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা তৃতীয় কাউকে নিয়োগের পক্ষে। রাষ্ট্রপতির কোটায় অতিরিক্ত নিয়োগ থাকায় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবমতো ফরিদ উদ্দিনকে সচিব করা সম্ভব নয় বলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে জটিলতার অবসান একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র।www.24banglanewspaper.com