৩০ লাখ টাকা বোনাস ঘোষণা। ঘরের মাঠ। স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক, নানা সাজে।
প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়ার যুবদল। বঙ্গবন্ধু কাপ জয় দিয়ে শুরু করার জন্য এসব
যথেষ্ট ছিল না?
সাদাচোখে উত্তর, ‘না’। একটু গভীরে গেলেই বেরোবে
সত্যটা। একজন মনোবিদ জরুরি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ দলে। তাঁর কাজই হবে
স্নায়ুচাপে ভোগা থেকে দলকে উদ্ধার করা। না হলে এমন ভরা জলসায়ও হারের হতাশা
সঙ্গী হবে!
প্রত্যাশার চাপই মামুনুলদের ভালো ফুটবল খেলার পথে বড় বাধা
মনে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কাপের ‘সেমিফাইনালে খেলবই’ বলে তাঁরা প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই মালয়েশিয়ার
কাছে ১-০ গোলে হার শেষ চারের রাস্তায় বিছিয়ে দিয়েছে অনেক কাঁটা। আগামী ২
ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শ্রীলঙ্কাকে হারাতে না পারলে তো বিদায়ই।
অথচ ঘরের
মাঠে ১৫ কোটি টাকার বর্ণিল টুর্নামেন্ট কত স্বপ্ন বুনেছে। হরতাল উপেক্ষা
করেও সিলেট স্টেডিয়াম ঘিরে উৎসবের আমেজ। বিয়েবাড়ির মতো চারদিক। মণিপুরি
নৃত্য, শুভ্র দেব-মিলাদের গান দর্শক মাতালেও খেলোয়াড়েরা আসল কাজটিই করতে
ব্যর্থ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই খাওয়া ম্যাচের একমাত্র গোলটি আর ফেরত দিতে
পারেনি।
গত আগস্টের নেপাল ম্যাচের ভূতই কি দাঁড়াল দুয়ারে! সেদিনও এই
সিলেট স্টেডিয়ামে দর্শক প্রত্যাশার চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে নেপালের কাছে
১-০ গোলে হারের হতাশা সঙ্গী। দুই ম্যাচে একটা গোল পর্যন্ত নেই! আফসোস
ছাপিয়ে সমালোচনার বানেই বিদ্ধ ফুটবল দল। এমন জমাট আয়োজনে কোথায় উজ্জীবিত
হবেন ফুটবলাররা, উল্টো মালয়েশিয়ার তরুণদের সামনে স্নায়ুচাপে ভেঙে প্রথম
মিনিট তিরিশেক চূড়ান্ত এলোমেলো। প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ বলা
হলেও এটি আদতে অনূর্ধ্ব-২১। শুরু থেকেই সেই দলের চাপের মুখে বাংলাদেশ দলকে
বিভ্রান্তও লাগল। প্রথম কুড়ি মিনিটেই স্বাগতিক দলকে তিনবার বাঁচাল
ক্রসবার! এর মধ্যেও বিক্ষিপ্ত আক্রমণ, কিন্তু গোল নেই। এমিলি তিনটি সুবর্ণ
সুযোগ হারিয়ে আরও হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছেন দলকে। দুবার সুবিধাজনক জায়গায়
থেকেও বলের নাগাল পাননি, পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল হতে পারত। একবার বল রাখতে
পারেননি পোস্টে। ১০ নম্বর জার্সি হরানোর দুঃখেই কী এমন মিস!
ডি
ক্রুইফের হাত ধরে আবার ১০ নম্বর জার্সিটা এদিন ফিরে পেয়েছেন মিডফিল্ডার
হেমন্ত। মাঝে ১০ নম্বর ছিল এমিলির গায়ে, কাল ৯ নম্বর জার্সির এমিলি গোলের
কাছে গিয়েও হতাশ করলেন। অন্তত একটা গোল তাঁর পায়ে দেখতে উদগ্রীব ছিলেন
সবাই।
মোহাম্মদ সাইজওয়ান এখানেই আলাদা। ৫৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে
আচমকা তীব্র শটে পরাস্ত করলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদকে। বলটা
একটু বাঁক খেয়ে পোস্ট এবং ক্রসবারের কোনা দিয়ে জালে (১-০)।
গোল খেয়ে
সাঁড়াশি আক্রমণে উঠল বাংলাদেশ। প্রথমার্থের সেই ছন্নছাড়া ছবিটাও বদলাল।
বল দখলে রেখে জায়গা বানিয়ে খেলছিল। কিন্তু গোলের রাস্তা বেরোলো না।
মালয়েশিয়ার গোলরক্ষক মোহাম্মদ ফারহানও খেললেন আস্থা নিয়ে। গোলের জন্য ডি
ক্রুইফ ডিফেন্ডার তুলে স্ট্রাইকার নামালেও কাজ হয়নি। বদলি স্ট্রাইকার
শাখাওয়াত রনির টোকা লাগল পোস্টে।
মালয়েশিয়া যুবদলটি অকুণ্ঠ প্রশংসা
পাবেই। গোল ধরে রাখতে দারুণ রক্ষণ করে গেল বাকি সময়ে। একটা দলের
সামর্থ্যের বড় বিজ্ঞাপন এটাই। স্বাগতিক দলকে শুরুতেই ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন
মালয়েশিয়ার কোচ রাজিপ ইসমাইল। তাঁর শিষ্যরা সেটি ভালোভাবেই করে বাংলাদেশ
ম্যাচ থেকে তুলে নিয়েছে তিনটি পয়েন্ট।
ম্যাচ শেষে অনেকেই রসিকতা করে
বলছিলেন, বাফুফেকে ৩০ লাখ আর দিতে হলো না। মালয়েশিয়ার যুবদলকে হারাতে
পারলেই যা বোনাস হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন সালাউদ্দিন। ফুটবলাররা টাকাটা
সত্যিই বাঁচিয়ে দিলেন!
বাংলাদেশ দল: রাসেল মাহমুদ, মিশু, ইয়াছিন, ইয়ামিন
(শাখাওয়াত রনি), জামাল, রায়হান, হেমন্ত, মামুনুল, সোহেল রানা (ওয়াহেদ),
জাহিদ, এমিলি।more-www.24banglanewspaper.com