শিরোনাম
Loading...

news review 1

reveunis 2

Phone-Video

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

ডিসিসির অবৈধ মার্কেট

www.24banglanewspaper.comঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) চার কাঠা জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে তিন তলা মার্কেট। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজসংলগ্ন এই জমির ওপর নির্মাণাধীন ভবনটির ফাউন্ডেশন দেয়া হয়েছে ছয় তলার। প্রায় দেড় বছর আগে ডিএসসিসির তদন্ত কমিটি ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো নির্বিঘ্নে চলছে বাকি তিন তলা নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে এটিকে বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়াও। এর পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। বাজার দর অনুযায়ী এ জমির বর্তমান মূল্য কমপক্ষে শত কোটি টাকা। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে এসব তথ্য। এছাড়া অবৈধ এই মার্কেটটি মেয়েদের কলেজের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১৯-১০-১৪ তারিখে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামছুন নাহার স্বাক্ষরিত এক আবেদনে বলা হয়েছে, কলেজসংলগ্ন জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেটটি মেয়েদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো মূল্যে মার্কেটটি উচ্ছেদ করা দরকার। এই জন্য সংশ্লিষ্টদের সহায়তাও চেয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বাকের হোসেন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মার্কেটটিকে বৈধতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএসসিসির মাসিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিল্ডিং যেভাবেই গড়ে উঠুক না কেন ফিটনেস ঠিক থাকলে অবৈধভাবে গড়ে উঠা মার্কেটটিকে বৈধতা দেয়া হবে। সমিতির সদস্যদের দোকান বরাদ্দ দেয়ার পর অন্য দোকানগুলো প্রচলিত নিয়মেই বরাদ্দ দেয়া হবে। ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য হাউসিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্স ইন্সটিটিউটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১ এপ্রিল নীলক্ষেতের ডিএসসিসির চার কাঠা জমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন নীলক্ষেত সিটি কর্পোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি একেএম সামছুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন। তাদের আবেদনপত্রে একজন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ ছিল। একই বছরের ১০ মে সমিতির নামে জমিটি বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় ডিএসসিসির প্রশাসক ছিলেন খলিলুর রহমান। বরাদ্দপত্রে বলা হয়, এই জায়গার ওপর অস্থায়ী অবকাঠামো করে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে সমিতির সদস্যরা। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে ওই জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছয় তলা ফাউন্ডেশনের ওপর তিন তলা অবৈধ মার্কেট।বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করায় তা খতিয়ে দেখতে গত বছরের শুরুতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএসসিসি। কমিটি তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে একই বছরের এপ্রিলে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে মার্কেটটিকে সম্পূর্ণ অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি জমির অস্থায়ী বরাদ্দ বাতিল এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া এই জমির আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।অবৈধ মার্কেট নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে, নীলক্ষেত মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এর পেছনে অনেক বড় বড় লোক রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তারা যোগসাজশ করে এসব করেছেন। আমাদের সমিতিকে তারা ব্যবহার করেছেন। আমরা বলির পাঁঠা হয়েছি। ফুটপাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে যে দোকানে আমরা ব্যবসা করতাম, সেই রকম একটি করেই দোকান পেয়েছি। আর ওপর তলার দোকানগুলো পেয়েছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।সরেজমিন দেখা গেছে, অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হলেও স্থায়ী অবকাঠামোয় বহুতল মার্কেট নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে ওই সমিতি। ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে তিন তলার নির্মাণ কাজ। ঘটনাটি আলোচনায় চলে আসায় অতি গোপনে চলছে বাকি কাজ। স্থানীয়রা জানান, আগে দিনের বেলায় নির্মাণ কাজ চললেও এখন তা করা হয় রাতে। মার্কেটের নিচ তলার দোকানগুলোতে ব্যবসার পসরা সাজিয়েছেন লেপতোশক ব্যবসায়ীরা।ডিএসসিসির সম্পত্তি ও প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোনো সম্পত্তি অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হলে সেখানে শুধু টিনশেডের অবকাঠামো নির্মাণ করা যায়। আর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তা ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। ডিএসসিসির বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী অস্থায়ী বরাদ্দে কোনো স্থায়ী অবকাঠামো করা যাবে না। যারা এই নীতিমালা লংঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করারও ক্ষমতা রয়েছে ডিএসসিসির।একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ডিএসসিসির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকলেও এক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, বড় কর্তারা ওই অবৈধ মার্কেট নির্মাতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এখানে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।ডিএসসিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হাউসিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্স প্রতিষ্ঠানের ফিটনেস সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ভবনটির বৈধতা দেয়া হলে সমিতির সদস্যরা বৈধভাবে ওইসব দোকানের মালিক হয়ে যাবেন। আর নাটের গুরুরা অবৈধ প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নেবেন- যা ডিএসসিসিতে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। পরে আরও বড় ধরনের অনিয়ম করতে উৎসাহিত হবেন সংশ্লিষ্টরা।হাউসিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্স ইন্সটিটিউটের সিনিয়র রিসার্স ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, ডিএসসিসি আমাদের কাছে ওই মার্কেটটির ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেছে। আমরা তিন লাখ টাকা ফি চেয়েছি। তারা এখনও কিছু জানায়নি। যদি তারা রাজি হয়, তাহলে আমরা বিল্ডিংটির মান যাচাই করে রিপোর্ট দেব।এদিকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামছুন নাহার যুগান্তরকে বলেন, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী মেয়েদের কলেজ। এই কলেজের সঙ্গে বহুতল মার্কেট হলে মেয়েদের চলাচলসহ ভেতরের সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। যেহেতু জায়গাটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর মার্কেটটিও গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে এটা ভেঙ্গে ফেলা উচিত। মার্কেটটি চালু হলে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Related Post:

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

pop Earnings